মে দিবসের তাৎপর্য আবু | সাঈদ তুলু
মে দিবসের তাৎপর্য  আবু | সাঈদ তুলু


''ভোর থেকে সারাদিন দিয়াছি শ্রম,

বিকালটা কাটলো নামতে।

সন্ধ্যাটা গেল সারাদিনের হিসেব কষে

রাতটা এখন বয়ে চলে...’’

 

বড় সাহেব কহিলেন- ‘না না না

আমার কর্মচারীকে আমি ভালোবাসি।

এখন বাড়ি যা তোরা, কাল তোদের ছুটি।

মে দিবসের বিশেষ ছুটি।’’

বলে অফিসের বড় সাহেব হেসে কুটিকুটি।

ছুটি শুনেই শুরু হলো শ্রমিকদের আনন্দ-নাচানাচি।

 

একজন শ্রমিক কহিলেন-

"মহানুভব হুজুর। আপনার দয়ার সীমা নাই,

মে দিবসের ছুটি আমাদের আনন্দের শেষ নাই।'

কাল পরিবারের সাথে কাটাবো

আর বাড়িতে বসে অফিসের দেওয়া

কাজগুলো শেষ করবো৷

যা বাড়িতে করতে দিয়েছেন দুদিন আগে!

ধন্যবাদ হুজুর, কৃতজ্ঞতা ছুটির তরে।"

 

বড় সাহেব কহিলেন হেসে-

"অবশ্য পরশু শুক্রবার আসতে হবে প্রত্যুষে-

শুক্রবার মানতে নাই-

ওটা তোমার নিজের কাজ, ছুটি কিসে? দায়িত্ব তাই-

টাকাও তো পাচ্ছিস বেশি, কম কী, কম কী-

প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কাজ করা তো ধর্মেরই রীতি

বেইমানি কী ধর্মের নীতি!"

‘‘জী হুজুর, জী হুজুর, আপনি মহানুভব

শুক্রবার বন্ধের দিন হলেও সমস্যা নাই। আপনিই সব।’’

 

স্মিত হাসি হেসে বড় সাহেব তৃপ্তির সাথে কহিলেন-

"পরদিন শনিবারে শিপমেন্ট যাবে, আসিস সবে।

প্রতিষ্ঠানের ইমেজ আর টাকা আসে শিপমেন্ট থেকে

শিপমেন্ট না হলে বেতন পারি কী করে?

আমিও তো তোদের মতো শ্রমিক

আমি কী ছুটি কাটাই? আমার কী আহ্লাদ নাই?

নিজেদের কাজ নিজেরা করিব তাতে শুক্রশনি কী যায়-আসে।"

 

শ্রমিক উত্তর করিল গর্বভরে-

"জী হুজুর। কোম্পানি না বাঁচলে আমরা বাঁচবো কী করে।

ধন্য আপনি বড় সাহেব।

আপনি আছেন বলেই তো আমরা আছি বেঁচে।

দরিদ্র জীবনে খাচ্ছি দুবেলা পেট পুরে।

শ্রমিক চালাতে কত দক্ষতা।

মাসে মাসে টাকা দিচ্ছেন মুঠি ভরে

বাড়ি গাড়ি কী নাই আপনার?

তারপরেও এত কাজ করেন প্রতিষ্ঠানকে ভালোবেসে।

বড় সাহেবই সব টাকা নিয়ে নেন কেউ বলেছে তাকে?

বড় সাহেবের কত বদান্যতা, মানবতা বিশ্বজোড়া।’’

 

বিদায় বেলায় খুশিতে বড় সাহেব উঠিলেন হাসিয়া-

"রবিবার থেকে আসিতে হবে সময় দেখিয়া।

ওটা তো সরকারি কর্মদিবস আমাদের কোনো হাত নাই

চাকরি করতে হলে সরকারি নিয়ম মানা চাই।।"

 

‘‘জী হুজুর, জী হুজুর। আসিবো ক্ষণ-

এখন তবে যাই রাত বয়ে যায় বহুক্ষণ।’’'

‘‘ এতক্ষণ শ্রমিককে রাখিছি ধরিয়া। ছি ছি ছি। লজ্জা!

তাড়াতাড়ি বাড়ি যা।কাল তোদের মে দিবসের ছুটি।

শ্রমিককে আমরা কত সম্মান করি, বুঝিলি।’’

 

‘‘জী হুজুর, জী হুজুর।’’

মনে মনে কহিলেন-

"বড় সাহেব দিলেন মে দিবসের ছুটি

এত বড় মহৎ মানুষ দুনিয়ায় নাহি জুটি।

শ্রমিকদের ভালোবাসেন, শ্রমিকের তরে জান

মে দিবসের তাৎপর্য বুঝেন কতবড় মহাপ্রাণ।’’

 

ছুটি দিয়ে একটু মুচকি হাসিলেন কটাক্ষে

শ্রমিকেরাও মুচকি হাসিলেন তাকিয়ে গবাক্ষে।

কিন্তু বড় সাহেব তা দেখিতে পাইলেন না।।



সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান